কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়

আপনি কি জানতে চান কোন ভিটামিনের অভাবে আমাদের মুখে ঘা হয়? অনেক মানুষ রয়েছে যারা মুখের ঘায়ের সমস্যাই ভুগছেন । আজকের এই পোস্টটি তাদের জন্য। 


সাধারণত আমরা জানি ভিটামিন সি এর অভাবে মুখে ঘা হয় । তবে আর কিছু কিছু  কারণে মুখে ঘা হয় । তাহলে আসুন জেনে নিই কোন ভিটামিনের অভাবে এবং কি কি কারণে মুখে ঘা হয়।

পোস্ট সুচিপত্রঃ কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়

কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়

সাধারণত আমরা অনেকেই মুখের ঘা এ সমস্যায় ভুগি। এই মুখে ঘা হওয়ার মূল কারণ হলো আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব। ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের মুখে ঘা হয়ে থাকে। এবং ফলিক এসিডের অভাবেও মুখে ঘা হতে পারে। এছাড়াও শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দিলে মুখে ঘা হতে পারে।এই ভিটামিন গুলির অভাবে মুখের ভেতরের নরম অংশে ঘা দেখা দিতে পারে।

ভিটামিন সি এর অভাব এবং ফলিক এসিডের অভাব ও শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দিলে আমাদের মুখে ঘা প্রদাহ ঠোঁটের ফাটল বা আলসার দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে মুখের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের ঘা, আলসার ইত্যাদি হতে পারে। যদি আপনি ঘন ঘন মুখের ঘা বা আলসারের মতো সমস্যায় ভুগেন তাহলে দ্রুত একজন ডাক্তারের সঙ্গে আপনার শরীরের ভিটামিনের অভাব আছে কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
 

ঘন ঘন মুখে ঘা হওয়ার কারণ

ঘন ঘন মুখে ঘা হওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে আমরা জানি সাধারণত আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব দেখা দিলে ঘন ঘন মুখে ঘা হয়। মুখের ভেতরে আঘাত লাগলে বা দুর্ঘটনাবশত কামর লাগলে অথবা ভিটামিন ও খনিজের অভাব দেখা দিলে ঘন ঘন মুখে ঘা হয়। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে অটোইমিউন রোগ, সংক্রমণ, বা হজমের সমস্যার কারণে আমাদের মুখে ঘা হতে পারে। 

কিছু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণেও মুখে ঘা হতে পারে। অনেক ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেমন হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাস, বা কক্সোস্যাকি ভাইরাস এগুলোর কারণে আমাদের মুখে ঘা হয়। ঘনঘন মুখে ঘা হলে আমাদের উচিত দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। সাধারণত উল্লেখিত এই কয়েকটি কারণে ঘন ঘন মুখে ঘা হয়।

কি করলে আমরা মুখে ঘা হওয়া থেকে বাঁচতে পারি

যেহেতু আমরা জানি কি কি কারনে আমাদের মুখে ঘা হয়। তাহলে সেই বিষয়গুলোর বা সে সকল ভিটামিন গুলোর অভাব পূরণ করতে পারলে আমরা মুখে ঘা হওয়া থেকে বাঁচতে পারি। এছাড়াও মুখে ঘা হওয়া থেকে বাঁচার জন্য আমাদের নিয়মিত মুখ পরিষ্কার রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, এবং ধূমপানের আমার পরিহার করা জরুরী। অথবা আমরা ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব পূরণ করার মাধ্যমে সেবা হওয়া থেকে বাঁচতে পারি। 

ভিটামিন সি এর অভাবে যেহেতু আমাদের মুখে ঘা হয়। অতএব ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আমরা মুখের ঘা হওয়া থেকে বাঁচতে পারি। আমাদের উচিত মুখে ঘা হওয়া থেকে বাঁচতে হলে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার এবং আয়রন যুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত। সাধারণত টক জাতীয় খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাই আমরা মুখে ঘা হওয়া থেকে বাঁচতে চাইলে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাব। তাহলে আমরা মুখে ঘা হওয়া থেকে বাঁচতে পারব।

মুখে ঘা হলে কোন ওষুধ খেতে হয়

মুখে ঘা হলে, ব্যথা কমাতে এবং নিরাময় প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু ঔষধ ও ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করা যেতে পারে।  সাধারণত ব্যাথা নাশক জেল, প্রদাহ বিরোধী ঔষধ, মাউথ ওয়াশ , এবং বিভিন্ন ধরনের ঘা নির্মূল করা ঔষধ খেতে হয়। এবং অবশ্যই মুখের ঘায়ের ঔষধ একজন একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে নেওয়া উচিত।

মুখের ঘা এর জন্য সিপ্রোজেন মলম ব্যবহার করা হয় । এবং চিবানো যাই এমন ট্যাবলেট খেতে হয়। মুখের ঘায়ের জন্য যে ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয় তার নাম হলো অ্যাসপিরিন  যা মুখের ঘা নির্মূল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো আমাদের মুখের ঘা কমাতে সাহায্য করে। যেমন  মধু, নারকেল তেল, এলোভেরা জেল, এবং লবণ পানি দিয়ে কুলি করা । লবন পানি গরম করে কুলি করলে মুখের ঘা এর জন্য এটি বেশ কার্যকরী হতে পারে। 

গ্যাসের কারণে কি মুখে ঘা হয়

কোন কোন ক্ষেত্রে গ্যাসের কারণেও মুখে ঘা হতে পারে। মুখের ঘা কখনো কখনো ডায়রিয়ার কারণেও হয়ে থাকে। এই লক্ষণ গুলি অস্থায়ী পরিস্থিতিতে দেখা দিতে পারে যা হঠাৎ করে আসে এবং তারপর উন্নত হয়, যার মধ্যে রয়েছে বদহজ্‌ গ্যাসের ব্যথা, এবং গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস।

বিশেষ করে যদি অ্যাসিড রিফ্লেক্স বা GERD (Gastroesophageal Reflux Disease) থাকে, তবে পাকস্থলীর এসিড মুখের ভিতরে চলে এসে ঘা বা প্রদাহ তৈরি করতে পারে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যেখানে পাকস্থলের এসিড বারবার খাদ্যনালীতে উঠে আসে। এর কারণে মুখের ঘা হয়।

মুখের ঘা এর জন্য কোন ডাক্তার দেখাবো 

মুখের ঘা একটি মারাত্মক রোগ। যার কারণে সব সময় আমাদের অস্বস্তি বোধ হয়। যদি মুখের ঘা ২ সপ্তাহ বা এর বেশি সময় ধরে থাকে এবং যদি ঘন ঘন মুখে ঘা হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মুখের ঘা এর জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অভিজ্ঞ ডাক্তার খুব সহজেই আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারে। 

প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য ওরাল  অ্যান্ড ম্যাক্সিলফেসিয়াল সার্জনদের শরণাপন্ন হতে হবে।বিশেষভাবে যদি দুই সপ্তাহ বা ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে মুখের ঘা স্থায়ী থাকে তাহলে অবশ্যই বায়োপসি বা মাংসের টিস্যু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কোন কোন সময় মুখের ঘা থেকে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাই অবশ্যই রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

মুখের ঘা দ্রুত দূর করার ঘরোয়া উপায়

মুখে ঘা হলে আমরা প্রথমত ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারি। যেমন গরম পানিতে সামান্য লবণ দিয়ে গড়গড়া বা কুলকুচি করতে পারি এটি মুখের ঘা কমাতে সাহায্য করে। এবং বেকিং সোডা মুখের ঘা সারাতে খুবই উপকারী। এটি পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে ফলে ঘায়ের জ্বালা ভাব কমে  আধ কাপ পানিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে কুলকুচি করলে দ্রুত ঘা কমে যায়। 

এছাড়াও মধু ঘা ভালো করতে সাহায্য করে। মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান এর গুনাগুন অনেক রয়েছে। ঘায়ের স্থানে সামান্য মধু লাগালে আরাম পাওয়া যায়। আবার নারিকেলের তেল দিয়েও ঘা নির্মূল করা যায়। মুখের ঘা হলে সে সময় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার মুখের ঘা কে দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে। আর যদি এই কৌশল গুলো অবলম্বন করে মুখের ঘা না কমে তাহলে অবশ্যই আপনাকে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

আলসার থেকে কি ক্যান্সার হতে পারে

আপনি কি জানতে চান, আলসারের কারণে কি আমাদের ক্যান্সার হয়? সাধারণত চিকিৎসকের মতে পাকস্থলীর আলসার যদিও সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টি করে না, তবে তাদের সাথে যুক্ত কারণ গুলি।যেমন দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ পাইলোরি সংক্রমণ, একজন ব্যক্তির পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন আলসার থেকেও ক্যান্সার হতে পারে। 

সামান্য আলসার বা মুখের ঘা থেকে ধীরে ধীরে মরণব্যাধি রোগ হয়ে যেতে পারে, ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগের আক্রান্ত হতে পারে। তাই এই আলসার বা মুখে ঘা হলে দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাতে করে এই সামান্য বিষয় ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে না পারে।

মুখের আলসার দূর করার উপায়

মুখের আলসার বা ঘা দ্রুত দূর করা কয়েকটি ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো আপনি চেষ্টা করতে পারেন। মুখের আলসার দূর করার জন্য আপনি গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন, এলোভেরা জেল লাগাতে পারে, বেকিং সোডা পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন, এবং ক্যামোমিল যা দিয়ে মুখ ধুয়ে সহজেই ঘরোয়া উপায়ে আপনার মুখের আলসার কমাতে পারেন। 

বেশিরভাগ মানুষের মুখের ঘা, বা আলসার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। যদি দ্রুত আপনার মুখের আলসার দূর করতে চান তাহলে আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খেতে হবে। মুখের আলসারের জন্য এই ট্যাবলেটটি খুবই উপকারী। এ সময় আমাদের মুখ মাউথওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। এভাবে আমরা দ্রুত মুখের আলসার দূর করতে পারি।

লেখকের মন্তব্য

আশা করছি পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। তো আমরা জানলাম ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের মুখে ঘা হয়। ঘা দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনেছি। আবার মুখের ঘা বা আলসার থেকে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের অভিজ্ঞ ও সার্টিফাইড ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত

আমরা যদি আমাদের শরীরে ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি বজায় রাখতে পারি তাহলে আমাদের শুধু মুখে ঘা নয়, অন্যান্য রোগ থেকেও রেহাই পেতে পারি। বিভিন্ন কারণে আমাদের মুখে ঘা হতে পারে ।তাই আমাদের মুখে ঘা হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে মুখের ঘা ভালো করতে হবে।পোস্টটি কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এতে করে আমরা পোস্ট লিখতে আগ্রহী হই। 

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url