টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া কার্যকরী উপায়-জেনে নিন

টনসিলের ব্যথা এবং ফোলা কমাতে চান, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টে আমরা টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো আপনাদের জানাবো। 
টনসিল-ফোলা-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়
টনসিলের ব্যথা এবং ফোলা কমানোর কিছু ঘরোয়া কার্যকারী উপায় রয়েছে। এই উপায়গুলো অবলম্বন করলে আপনি টনসিলের ব্যথা এবং ফোলা ঘরোয়া উপায়ে কমাতে পারবেন। তাই পুরো পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো। 

পোষ্ট সূচিপত্রঃ টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়

টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়

সাধারণত ঠান্ডা কাশি, সংক্রমণ বা এলার্জির কারণ মানুষের টনসিল হয়ে থাকে। আর টনসিল হলে গাল ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যথা করে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি চাইলে ঘরে বসেই টনসিল এর ব্যথা এবং ফোলা কমাতে পারেন। আজকে আমরা টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আপনি যদি টনসিল ফোলা কমাতে চান তাহলে পুরো পোস্টটি পড়বেন। 

টনসিলের ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো হলোঃ 
  • গরম লবণ পানির গার্গল করা
  • গরম পানি বা হারবাল চা পান করা
  • আদা মধু খাওয়া 
  • গরম ভাপে নিঃশ্বাস নেওয়া
  • তুলসী পাতা ও গোলমরিচ পানিতে ফুটিয়ে খাওয়া
  • ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলা
  • নরম ও হালকা গরম খাবার খাওয়া
  • বিশ্রাম নিতে হবে
  • প্রচুর পরিমাণে পানি বা ফলের রস পান করা ইত্যাদি
সাধারণত টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া এই উপায় গুলো মেনে চললে আপনি এর ফলাফল দেখতে পাবেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। 

টনসিল হলে কি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত

আমরা অনেক সময় এই ভুলটাই করে থাকি যে টনসিল হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত নয়। তবে এ ধারণাটা সম্পূর্ণই ভুল। টনসিল হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। তবে টনসিল অনেক সময় ঘরোয়া উপায়ে সেরে যায়। কিন্তু টনসিল হলে রিস্ক না নিয়ে দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা পরিস্থিতি যদি ভয়াবহ হয়ে যায় তাহলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই টনসিল হলে প্রথমে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 
টনসিল-ফোলা-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়
টনসিল হলে আমাদের উচ্চ জ্বর হয়, খাবার গিলতে বা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, গলা ফুলে যায়। তাই বাড়িতে বসে না থেকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আপনি যদি ডাক্তারের কাছে না যান তাহলে আপনার রোগটি সম্পূর্ণভাবে ভালো করতে পারবেন না। হলে বারবার টনসিলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। টনসিল হলে প্রথমে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে এরপর বাসায় এসে টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারি। এতে দ্রুত টনসিলের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

টনসিল হলে ডাক্তার কি ধরনের চিকিৎসা দেয়

টনসিল হলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার রোগীর রোগের ধরন এবং অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা দেয়। টনসিলের রোগী একেকজনের অবস্থা একেক রকম হয়। তাই ডাক্তার রোগীর অবস্থা দেখে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। তবে সাধারণত ডাক্তার যে ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকে সেগুলো হলোঃ 
  • ঔষধ চিকিৎসা দেয়
  • সাপোর্টটিভ ট্রিটমেন্ট দেয়
  • অস্ত্রপচার করার পরামর্শ দেয় (Tonsillectomy)
সাধারণত ডাক্তার এ ধরনের চিকিৎসা গুলো দিয়ে থাকে। ঔষধের চিকিৎসা অর্থাৎ বিভিন্ন মেডিসিন বা এন্টিবায়োটিক মেডিসিন দিয়ে থাকে। সাপোর্টটিভ ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ ঘরোয়া উপায় যেমন, লবণ পানি দিয়ে গার্গল, গরম খাবার বা গরম পানি পান করতে বলে এবং প্রচুর বিশ্রাম নিতে বলে। এবং অস্ত্রপচার মানে হলো টনসিল যখন বারবার হয় তখন ডাক্তার টনসিল অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন ডাক্তার কি ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। 

টনসিল ও গলা ব্যথার পার্থক্য 

টনসিল এবং গলা ব্যথার ধরন একই হলেও আসলে এদের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কিছু পার্থক্য আছে। টনশীল সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের ফলে হয়ে থাকে। এবং এর ব্যথা ৭ থেকে১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে যদি সময় মত এর চিকিৎসা না নেন তাহলে। আর এই দিকে গলা ব্যথা হয় সাধারণত ঠান্ডা লাগা, ধুলোবালি, ধূমপান বা বিভিন্ন ভাইরা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত এই গলা ব্যথা ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। আসুন তাহলে সেগুলো জেনে নেই। 

টনসিলের ব্যথা
  • গলার ভেতরে দুই পাশে টনসিল ফুলে ওঠে
  • গিলতে খুব কষ্ট হয়
  • অনেক সময় জ্বর আসে
  • গলায় দুর্গন্ধ হয়
  • কানে ব্যথা ছড়াতে পারে
  • টনসিলে লালচে বা সাদা দাগ অথবা পূজ দেখা দেয়
গলা ব্যথা
  • গলায় শুষ্কতা বা জ্বালাপোড়া হয়
  • পুরো গলার ভেতর খসখসে ও শুকনো লাগে
  • কাশি থাকতে পারে
  • সাধারণত জ্বর নাও থাকতে পারে
  • গলা হালকা ব্যথা বা চুলকানি অনুভূত হয়
  • পানি বা খাবার গিলতে অসুবিধা হয়
মূলত এগুলোই হল টনসিল এবং গলা ব্যাথার পার্থক্য। আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন কোন লক্ষণগুলো দেখলে কি হয়েছে তা বোঝা যায়। 

লবণ পানিতে গার্গল করার উপকারিতা

লবণ পানিতে গার্গল করার উপকারিতা আপনার যদি টনসিল হয়ে থাকে তাহলে আপনি চাইলে ঘরোয়া ভাবে সর্বপ্রথম লবণ পানিতে গারগোল করতে পারেন। এটি একটি খুবই ঘরোয়া উপকারী পদ্ধতি যেটি আপনার টনসিলের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। লবণ পানিতে গার্গল করলে গলার ভেতরের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংস হয় এতে গলা ব্যথা থেকে দ্রুত আরাম দেয়। তবে অবশ্যই গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে তারপর হালকা গরম থাকতে থাকতেই সেই পানি দিয়ে গার্গল করতে হবে। 
লবণ পানিতে থাকা উপাদানগুলো গলার ভেতরে প্রদাহ কমায়। বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে। লবণে অ্যান্টিসেপটিক গুণ রয়েছে যা গলার ভেতরে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংস করতে সাহায্য করে। গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করলে গলার ভেতরের অস্বস্তি কিছুটা কমে। টনসিল হলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। আপনি যদি গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করেন তাহলে মুখের সেই দুর্গন্ধ দূর হয়। এক কথায় বলা যেতে পারে ঘরোয়া সহজ উপায় গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে কার্যকরী উপায় যা আপনাকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে। 

রসুন খাওয়ার মাধ্যমে টনসিল ফোলা কমানো

রসুন একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন। বিভিন্ন সময়ে এটি এন্টিবায়োটিক এর মত কাজ করে। এতে অ্যালিসিন নামক প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা আপনার দেহের জীবাণু নাশ করতে সাহায্য করে। যদি আপনার টনসিল হয়ে থাকে তাহলে রসুন হলো একটি দারুন কার্য করে উপায়। টনসিল হলে আপনি যদি রসুন খান তাহলে দ্রুত আপনার টনসিলের ফোলা কমে যাবে। আসুন জেনে নেই টনসিল হলে এর ফোলা কমানোর জন্য কিভাবে রসুন খেতে হবে। 
টনসিল-ফোলা-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়
আপনি যদি টনসিলের ফোলাই ভুগতে থাকেন তাহলে আপনাকে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে হবে। প্রতিদিন ১-২ কোয়া রসুন খাওয়া উচিত এতে আপনি দ্রুত উপকার উপলব্ধি করতে পারবেন। আবার গরম পানিতে ২-৩ কোয়া রসুন ভালোভাবে ফুটিয়ে সেদ্ধ করে সেই ফোটানো গরম পানি গরম অবস্থায় ধীরে ধীরে পান করতে হবে তাহলে দ্রুত টনসিলের ফোলা কমে যাবে। এছাড়াও মধুর সাথে মিশিয়ে রসুন খাওয়া যায় এতে গলার বিভিন্ন জ্বালাপোড়া ও দুর্গন্ধ দূর হয়। আপনি রসুন বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। 

গরম ভেষজ চা পান করার ঘরোয়া পদ্ধতি

টনসিল হলে এর ফোলা বা ব্যথা কমানোর জন্য গরম ভেষজ চা পান করা খুবই উপকারী। ভেষজ চা এর থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান গুলো টনসিলের ফোলা ও ব্যথা কমায়। ভেষজ যা বলতে বোঝায় যেমন, আদা চা, তুলসী চা, দারুচিনি বা লবঙ্গ চা, কেমোমাইল চা। আসুন জেনে নেই গরম ভেষজ চা পান করার ঘরোয়া পদ্ধতি। 
আদা চা 
  • এক কাপ পানি নিয়ে এক ইঞ্চি মত আদা কুচি কুচি করে কেটে তা ফুটন্ত পানিতে পাঁচ মিনিট মতো ঢেকে রাখুন এরপর ফুটানো পানিতে মধু মিশিয়ে পান করুন এটি আপনার টনসিলের ফোলা ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
তুলসী চা
  • এক কাপ পানি ৭- ৮ টি তুলসী পাতা ১০ মিনিট পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে সেই ফোটানো পানিতে লেবুর রস দিয়ে গরম অবস্থায় পান করুন এটি আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে টনসিলের ফোলা কমাবে। 
দারুচিনি বা লবঙ্গ চা
  • কাপ পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি গুড়া এবং দুইটি লবঙ্গ দিয়ে একসাথে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন এরপর সেগুলো ছেঁকে নিয়ে তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন এটি আপনার গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। 
 ক্যামোমাইল চা
  • শুকনো ক্যামোমাইল এক কাপ ফুটানো গরম পানিতে পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন এরপর তা পান করুন। এটি আপনার গলা কে নরম করবে এবং এর ব্যথা ও প্রদাহ দূর করবে। 
তবে মনে রাখবেন এ সকল ভেষজ চা সবসময় কুসুম গরম অবস্থায় পান করবে নয়তো গলা ব্যথা দূর না হয়ে গলার জালা পোড়া বাড়তে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত ২-৩ কাপ এই ভেষজ পান করা উচিত তবে অতিরিক্ত নয়। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি।

লেখকের মন্তব্যঃ টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় 

পুরো পোস্ট জুড়ে আমরা টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। আসলে এতক্ষণ আমরা টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় যেগুলো বর্ণনা করলাম তার সবগুলোই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষিত। তাই আপনার যদি টনসিল হয় এবং যদি এর কারণে আপনার গাল ফুলে যায় তাহলে আপনি নির্দ্বিধায় এই ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন অতিরিক্ত কোন কিছুই করবেন না। কারণ অতিরিক্ত কিছু উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। 

টনসিল এবং গলা ব্যথা কখনোই এক নয়। তাই টনসিল ও গলা ব্যথা নিরাময়ের উপায় ভিন্ন। তাই আপনাকে আগে জানতে হবে কোনটা গলা ব্যথা আর কোনটা টনসিল। আমরা এই পোস্টে আপনাকে এটাও জানিয়ে দিয়েছি যে টনসিল হলে কোন কোন লক্ষণ গুলো দেখা যায় এবং গলা ব্যথা হলে কোন কোন লক্ষণ গুলো দেখা যায়। আশা করছি এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। পরবর্তী কোন কিছু জানতে চাইলে কমেন্টে জানান। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url