নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়

আপনি কি জানতে চান নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখের জন্য অনেক উপকারী। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

নিম-পাতা-ও-কাঁচা-হলুদ-মুখে-দিলে কি-হয়

পুরো পোস্টটি পড়ে আপনি নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি উপকার হয় এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো জানতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নিই। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয় 

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। সহজ ভাবে বলতে গেলে এটি একটি প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ারের মিশ্রণ। এটি আমাদের ত্বকের বিভিন্ন উপকার এনে দিতে পারে। উপকারের সাথে কিছু ক্ষতিও করে তাই সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত এবং ক্ষতিকর দিক গুলো জানা উচিত। নিম পাতায় আছে প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং হলুদের রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। 
ফলের দুটো একসাথে ত্বকের ব্রণ ও জীবাণু কমাতে সাহায্য করে। ব্রণের লাল ভাব কমায়। নিয়মিত এই নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে ত্বক হয়ে ওঠে দাগ মুক্ত ও উজ্জ্বল। নিমপাতা আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। চুলকানি থেকেও মুখে বিভিন্ন দাগ হয় আর এই নিমপাতা সে দাগ এবং চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। নিমপাতা তে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক গুণ যা ত্বকের চুলকানি ও র‍্যাশ কমায়। এছাড়া এই নিমপাতা ও কাচা হলেন ব্যবহার করলে কোন ক্ষেত্রে ক্ষতিও হতে পারে চলুন নিচে বিস্তারিত জেনে নিই। 

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা জানবো। নিম পাতা ও খাটি কাঁচা হলুদের উপকারিতা অনেক বেশি। বিশেষ করে ত্বক, চুল এবং শরীরের জন্য বেশি উপকারী। নিম পাতা ও কাঁচা হলদে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান গুলো আমাদের ত্বকের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। চলুন পয়েন্ট আকারে জেনে নিন নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ এর উপকারিতা গুলো। 

  • ব্রণ ও ত্বকের ইনফেকশন দূর করে 
  • ত্বকের দাগ ও ছোপ হালকা করে 
  • অয়েলি স্কিন নিয়ন্ত্রণে রাখে 
  • এলার্জি, চুলকানি ও র‍্যাশ কমায় 
  • ত্বককে গ্লোয়িং এবং ফ্রেশ দেখায় 
  • জ্বালাপোড়া ও সানবার্ন কমায় 
  • চুল পড়া ও খুশকি দূর করে 
  • ক্ষত ও কাটাছেঁড়া শুকাতে সাহায্য করে 
এছাড়া আরো অনেক ধরনের উপকার করে থাকে এই নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ। আমি আপনাদের বলতে চাই বিশেষ করে মহিলাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা উচিত। 

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের অপকারিতা

আমরা জানি নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তবে ভুল ব্যবহারে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের কিছু অপকারিতা রয়েছে। ভুল ভাবে ব্যবহার করলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে ত্বকের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। সাধারণত অতিরিক্ত ব্যবহার করলে এই সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কারো কারো ত্বকে নিম পাতাও কাঁচা হলুদ নাও সুট করতে পারে। চলুন জেনে নেই নিম পাতাও কাঁচা হলুদের উপকারিতা গুলো কি কি। 

  • তোকে এলার্জি বা রেশ হতে পারে 
  • তোকে হলুদের হলুদ দাগ পড়ে যেতে পারে 
  • অতিরিক্ত শুকিয়ে ফেললে ড্রাই স্কিন হতে পারে 
  • চোখে গেলে জ্বালা ও ফোলা ভাব হতে পারে 
  • অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বকের ব্যালেন্স নষ্ট হয় 
  • সংক্রমণ থাকলে ভুল ভাবে ব্যবহার করলে ইনফেকশন হতে পারে 
  • বিশুদ্ধ না হলে আরো ক্ষতি করতে পারে 
সাধারণত এ সকল ক্ষতিকর দিকগুলো দেখা দিতে পারে। তাই আপনাকে সঠিকভাবে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা জানতে হবে। 

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের সঠিক ব্যবহার

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ এই দুইটি প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের শরীর, ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। তবে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের সঠিক ব্যবহার আপনাকে জানতে হবে। আপনি যদি এর সঠিক ব্যবহার না জানেন তাহলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে। আপনি চাইলে এই নিম পাতা আপনার মুখে, চুলে এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের চুলকানি এবং ঘায়ে ব্যবহার করতে পারেন। 
নিম-পাতা-ও-কাঁচা-হলুদ-মুখে-দিলে কি-হয়
তাই নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার আগে তার সঠিক ব্যবহার আপনার জানা উচিত। আপনি যদি ত্বকের জন্য ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলোর সাথে চুলে দেওয়া এবং শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে যা যা করতে হবে তার সাথে মিল নেই। তাই একেক জায়গায় ব্যবহারের জন্য একেক নিয়ম অবলম্বন করতে হবে। চলুন নিচে জেনে নিন ত্বক, চুল এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যবহারের জন্য কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করতে হবে।  

মুখের ত্বকে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার

মুখের ত্বকে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার জন্য আপনাকে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে। এটি আপনার ত্বকের ব্রণ, দাগ ও তেলতেলে ভাব দূর করবে। এর জন্য আপনার যা যা লাগবে সেগুলো হলো ১০-১২ টা নিমপাতা, কাঁচা হলুদের পেস্ট এক চা চামচ এবং গোলাপ জল বা পানি সামান্য। এবার আসুন জানি কিভাবে ব্যবহার করবেন। 
নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে পেস্ট বানাবেন। তারপর এর সাথে কাঁচা হলুদের পেস্ট ও গোলাপজল বা পানি মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করবেন। এরপর সেগুলো মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে আপনার মুখের ব্রণ ত্বকের ইনফেকশন ত্বকের দাগ দূর করে ত্বকের ন্যাচারাল গ্লো আনবে। 

চুল ও মাথার ত্বকে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার 

চুল ও মাথার ত্বকে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার বিধিগুলো এখন আমি আপনাদের জানাবো। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ চুল ও মাথার ত্বকের ব্যবহার করলে খুশকি কমাতে ও মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনার যা যা লাগবে সেগুলো হলো একমুঠো নিমপাতা, কাঁচা হলুদ এক চা চামচ এবং এক গ্লাস পানি। চলুন জেনে নিই কিভাবে ব্যবহার করবেন। 

এর জন্য আপনাকে প্রথমে পানি ফুটিয়ে তাতে নিমপাতা দিন এভাবে দশ মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে নিন। এরপর এতে কাঁচা হলুদের পেস্ট মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে মাথার ত্বকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন। এভাবে ব্যবহার করলে আপনার খুশি কমবে, মাথার ত্বকের চুলকানি দূর হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। 

শরীরের ত্বকে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার

শরীরের ত্বকে নিম পাতা ওর কাঁচা হলুদের ব্যবহার আপনার শরীরের বিভিন্ন চুলকানি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ও র‍্যাশ দূর করবে। এগুলো আপনি যেভাবে ব্যবহার করবেন, নিম পাতা সেদ্ধ করে পানি ঠান্ডা করবে তারপর এতে অল্প কাঁচা হলুদের পেস্ট মিশাবেন তারপর তুলা দিয়ে ইনফেক্টেড জায়গায় লাগাবেন। এভাবে দিনে ১-২ বার ব্যবহার করলে দ্রুত ফলাফল দেখতে পাবেন। তবে খোলা ঘা বা অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গায় হলুদ লাগাবেন না। 
এছাড়াও আপনি নিমপাতা ও হলুদের স্নান করতে পারেন। এর জন্য এক গ্লাস পানিতে এক মুঠো নিম পাতা ফুটিয়ে নিবেন তারপর পানি একটু ঠান্ডা হলে তাতে সামান্য কাঁচা হলুদ দিবেন এরপর এই পানি দিয়ে গোসল করবেন। ফলে আপনার শরীরের চুলকানি কমবে, ত্বক পরিষ্কার হবে এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর হবে। বিশেষ দ্রঃ যাদের ত্বক খুব সেনসিটিভ তাদের কাঁচা হলুদ কম ব্যবহার করা উচিত।  

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম পাতা ও হলুদের উপকারিতা 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম পাতা ও হলুদ প্রাকৃতিক ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। যদিও এগুলো কোনভাবেই ইনসুলিন বা ওষুধের বিকল্প নয়, তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। চলুন জেনে নিই নিম পাতা ও হলুদ ডায়াবেটিসের জন্য কি কি উপকার করে। 
  • ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে 
  • রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে 
  • লিভার ভালো রাখে এবং শরীরের গ্লুকোজ নিয়মে আনে 
  • প্রদাহ কমিয়ে ডায়াবেটিস জটিলতা কমায় 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কোষ রক্ষা করে 
সাধারণত নিম পাতা ও হলুদ খেলে শরীরে এ সকল উপকার করে। ফলে ডায়াবেটিস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে

 আমরা অনেকেই জানিনা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিভাবে নিমপাতা ও হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই এখন আমি আপনাদের জানাবো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এই নিমপাতা ও হলুদ। আপনি যদি নিয়মিত এই নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে। চলুন তাহলে জেনে নেই কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। 
নিম-পাতা-ও-কাঁচা-হলুদ-মুখে-দিলে কি-হয়
এক গ্লাস পানিতে ৮-১০ টি নিমপাতা ফোটান এরপর সেগুলো থেকে হালকা গরম অবস্থায় পান করুন। এভাবে সপ্তাহে ৩-৪ দিন পান করুন। এরপর আপনি চাইলে আধা চা চামচ হলুদের পেস্ট বা গুড়া হলুদ এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে নয়, নরমালি খাবারের পরে খাওয়া ভালো। এরপর আরেকটি নিয়ম হলো নিম ও হলুদের মিশ্রণ অর্থাৎ নিম পাতার রস এক চা চামচ ও হলুদের পেস্ট হাফ চামচ মিশিয়ে দিলে একবার খাবার পরে খান। এটাই হল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিমপাতা ও হলুদের সঠিক ব্যবহার। 

শেষ কথাঃ নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয় 

উপরে পুরো পোস্ট জুড়ে আমি আপনাদের নিম পাতাও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়,  নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনার মুখের ত্বকে থাকা দাগ ও ব্রণ দূর করতে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ খুবই উপকারী। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দুটোতেই রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

অনেক সময় আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ফাংগাল দেখা দেয় আবার অনেকের শরীরে চুলকানি হয় এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে পারি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ আমাদের উপকার করে থাকে। বিশেষ করে মহিলাদের ত্বক সুন্দর রাখতে এই নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পোস্টটি কেমন লেগেছে তা কমেন্টে জানাবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url