খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়-বিস্তারিত জানুন

আপনি কি জানতে চান খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়? নিম পাতার অনেক রোগের সঠিক সমাধান হলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। নিম পাতার সঠিক ব্যবহার করতে চাইলে আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ  পড়ুন।

খালি-পেটে-নিম-পাতার-রস-খেলে-কি-হয়

নিমপাতার রস খালি পেটে খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ  করা সম্ভব। । এটি প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহৃত একটি ঔষধি গাছ। চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার কিছু আশ্চর্য  গুনাগুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় তা অনেকেই জানেনা। নিম পাতার রস খেলে কি হয় তা জানলে আপনিও অবাক হবেন। কারণ নিম পাতার রস আমাদের শরীরে রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে, চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে, পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে নিম পাতার রস আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং লিভারে টক্সিন দূর করতেও এর ভূমিকা অতুলনীয়। আপনারা চাইলেই আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে নিম পাতা রাখতে পারেন। নিম পাতা শরীরে বিভিন্ন ধরনের  সমস্যার সমাধানে অনেক বেশি কার্যকর।

প্রাচীন কাল থেকে আয়ুর্বেদরা বলে আসছে যে সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে শরীরের অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিম পাতার রস তেতো স্বাদের হলেও এর বিশেষ ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। নিমপাতা প্রকৃতির একটি বিশেষ উপকারী সম্পদ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। নিমপাতা আমাদের শরীরে জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি ত্বক ও চুলের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে এর সঠিক ব্যবহার করতে জানতে হবে । নিম পাতার রস খেলে আমাদের শরীরে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর শুকিয়ে যায়

পাত থেকে ছয়টি নিমপাতা পানিতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে এরপর নিম পাতার একটি পেস্ট তৈরি করে এটির রস বের করতে হবে। এরপর এটি খালি পেটে খেতে হবে। নিম পাতার রস খালি পেটে খেলে এর ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খাওয়া যেতে পারে। তাহলে নিম পাতার উপকারিতা পাওয়া যাবে। এভাবে নিয়মিত নিমপাতা খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাহলে বুঝতেই পারছেন নিম পাতার রস সঠিক নিয়মে খেলে কতটা উপকার পাওয়া যায়।

পেটের সমস্যায় নিম পাতার রস 

পেটের সমস্যার জন্য নিম পাতার রস অনেক উপকারী। আয়ুর্বেদের মতে পেটের বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ সমাধান হলো নিম পাতার রস। এটি আমাদের গ্যাস্টিকের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। নিম পাতার রস পেটের কৃমিনাশক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নিম পাতার রস আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ফলে পেটের অম্বল অথবা গ্যাস এর সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিম পাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিমপাতার রস আমাদের পেটের বিভিন্ন ধরনের রোগ মুক্ত করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরে লিভার ও পচনতন্ত্র পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে।

নিম পাতা খাওয়ার পূর্বে কিছু সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে তারপর নিমপাতা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন নিমপাতার রস খালি পেটে খেলে পেটের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে দুই সপ্তাহের বেশি নিমপাতা রস খেলে শরীরে ক্ষতি হবে। তাই নিমপাতা খাওয়ার পূর্বে এ সকল নিয়মগুলো অবলম্বন করা উচিত। তাহলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে দাঁড়াবে। তাই নিম পাতার রস আমাদের নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে।

নিম পাতার রস পেটের সমস্যা দূর করতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তবে নিমপাতা রস অল্প পরিমাণে এবং সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে। তবেই এর সঠিক উপকার পাওয়া সম্ভব। নিম পাতা শিশুর থেকে শুরু করে বড় মানুষ সকলের জন্যই পেটের সমস্যা দূর করতে অনেক সাহায্য করে। তাই অবশ্যই আমাদের সুস্থভাবে বাঁচার জন্য পেটের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত নিম পাতার রস খেতে হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন পেটের সমস্যা নিরাময়ের জন্য নিম পাতা কতটা জরুরী।

নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয়  

নিম পাতার গুড়া খেলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। তবে ভালো উপকার পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম ও সঠিক পরিমাণে খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য একটি মহা ঔষধ হতে পারে। নিম পাতা আমাদের শরীরের ভেতর থেকে টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে বলে আমাদের ত্বকের যেকোনো ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে যেমন ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, যেকোনো ধরনের ব্রণ, ফুসকুড়ি,  ইত্যাদি সমস্যায় সমাধান নিয়ে আসে। নিম পাতা গুড়া খেলে আমাদের শরীরের ওজন কমাতেও অনেক সাহায্য করে।

খালি-পেটে-নিম-পাতার-রস-খেলে-কি-হয়

নিমপাতা গুড়া খেলে কি হয় জানেন? এটি আমাদের শরীরে  মৌসুমী জ্বর, ঠান্ডা লাগা, কাশি হয় এগুলো থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়া যায় নিমপাতা গুড়া সঠিক নিয়মে খেলে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মৌসুমীর জ্বর, ঠান্ডা লাগা ও কাশি নিরাময়ের জন্য কিভাবে পাতা গুড়া তৈরি করতে হবে। নিমপাতা গুড়া খাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে নিম গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর পাতাগুলো খুব ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করা হয়ে গেলে এগুলো রোদে শুকাতে দিতে হবে। নিমপাতা গুলো রোদে শুকাতে হবে।

নিম পাতা গুলো রোদে শুকানোর পর এগুলো খুব ভালোভাবে গুড়া করে নিতে হবে। এরপর যদি আপনার শরীর জ্বর বা কাশিতে দীর্ঘদিন আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত নিয়মিত খেতে হবে। কিন্তু যদি স্বাভাবিক মাত্রার জ্বর বা অল্প পরিমাণে ঠান্ডা লাগার সমস্যা হয় তাহলে চার থেকে পাঁচ দিন নিয়মিত নিম পাতা গুড়া খেতে হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন নিমপাতা গুড়া আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী।

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম

আমাদের সকলেরই সুস্থ থাকার জন্য নিমপাতা খাওয়া প্রয়োজন। খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া গেলেও এই পাতার রস সঠিক নিয়মে না খেলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই নিমপাতা খাওয়ার নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেকোনো ঔষধ আমাদের  সঠিক নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া উচিত। তাই নিমপাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার নিয়ে আসলেও এটি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। তাই এর ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সঠিক নিয়মে নিম পাতা খেতে হবে।

আরও পড়ুনঃ কালোজিরা ফুলের মধু চেনার উপায়

নিম পাতা আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে উপকার পেতে পারি। । নিমপাতা যদি নিয়মিত খাওয়ার পর কিছুদিন বাদ দিয়ে আবার খাওয়া যায় তাহলে এর ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। নিম পাতার চা তৈরি করে ও খাওয়া যায়। প্রথমে কিছু নিমপাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানিতে চার থেকে পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে এরপর মধু মিশিয়ে খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করা যায়। তবে দুই সপ্তাহের বেশি খাওয়া উচিত নয় কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে নিমপাতা খেলে শরীরের জন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আপনি যদি নিয়মিত নিম পাতার রস খালি পেটে খেতে পারেন এতে আপনার পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে দুই সপ্তাহের বেশি নিম পাতার রস খেলে শরীরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিম পাতা গুড়া করে কিছু পরিমাণ পানি নিয়ে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে করতে পারেন এতে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়তা করে। আবার তাজা কয়েকটি নিমপাতা নিয়ে সেগুলো পেস্ট তৈরি করে এর সাথে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে খেলে নিম পাতার  ঔষধি গুনাগুন আরো অনেক বেড়ে যায়। 

নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম 

নিম পাতা আমাদের শরীরের জন্য যতটা উপকারী ঠিক ততটাই উপকারী আমাদের চুলের জন্য। সঠিক নিয়ম অনুযায়ী যদি নিম পাতা ব্যবহার করা যায় তবে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যায়। চুলকে স্বাস্থ্যজ্জল করতে সাহায্য করে, চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বিশেষ করে চুলের খুশকি ও উকুন দূর করতে সাহায্য করে এই নিমপাতা। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ বেশি পরিমাণ ব্যবহার করলে চুলে পুষ্টিহীনতার সমস্যা দেখা দেয়। তাই চুলে নিমপাতা ব্যবহারের জন্য সঠিক পরিমাণ ও নিয়ম মেনে ব্যবহার করা উচিত।

চুলের খুশকি দূর করার জন্য প্রথমে গাছ থেকে কিছু নিমপাতা নিয়ে সেগুলো ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এবার এগুলোর একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেজ তৈরি করা হয়ে গেলে এগুলো চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মাসাজ করতে হবে। এরপর এক থেকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা থেকে  মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিম পাতা চুলের খুশকি দূর করতে অনেক ভালো ফলাফল দেয়।

চুলের বৃদ্ধি সাধন ও চুলের গোড়া মজবুত করতে নিম পাতার অনেক উপকার পাওয়া যায়। কিছু পরিমাণ নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে এগুলো একটি পেজ তৈরি করতে হবে এরপর নারিকেল তেল অথবা টক দই এর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি সাধন করে ও চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। আবার আপনি চাইলে নিম পাতার পেস্ট লেবু অথবা এলোভেরা জেল এর সাথে মিশেও ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোর সাথে নিমপাতা ব্যবহার করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এতে আপনার চুল আরও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে এবংআরো আকর্ষণীয় দেখাবে।

ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

 প্রাচীন কাল থেকেই ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। নিমপাতা যদি নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করা যায় তাহলে ব্রণের সমস্যা দূর করা যায়। নিম পাতা ব্যবহারের কিছু সঠিক পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো হল পাঁচ থেকে ছয়টি নিমপাতা নিয়ে ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এরপর ত্বকের যে অংশে ব্রণের সমস্যা রয়েছে সেই অংশগুলোতে নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করতে হবে এরপর ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে আপনি চাইলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন।

নিম পাতা আপনি চাইলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনি ভাল ফলাফল পাবেন। আবার নিম পাতার পেস্ট এর সাথে অল্প পরিমাণে কাঁচা হলুদ এর পেস্ট তৈরি করে নিম পাতার পেস্ট এর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ব্রণের ওপর ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই দিন একবার করে ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

নিমপাতা যদি আপনি চায়ের মত করে পান করতে পারেন তাহলে আরও বেশি ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। কারণ এটি আমাদের শরীরের ভেতর থেকে ব্রণের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। প্রথমে কিছু পরিমাণ নিমপাতা নিতে হবে এটি শুকনা পাতা অথবা নিমপাতা গুড়া নিয়ে ফুটন্ত পানিতে তিন থেকে চার মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে এরপর এটি পান করলে শরীরের ভেতর থেকে ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নিমপাতা এভাবে দিনে একবার সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন পান করলে শরীরের ভেতর থেকে ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

চর্ম রোগে নিম পাতার ব্যবহার

চর্ম রোগে নিম পাতার ব্যবহার এটি একটি বিশেষ । নিমপাতা চর্মরোগে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা যায় তাহলে চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিমপাতা আমাদের শরীরের জীবাণুমুক্ত করতে সাহায্য করে। তাই যেকোনো ধরনের চর্ম রোগের ক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহারের বিকল্প নেই। তাই বলা যায় চর্ম রোগের জন্য নিম পাতার ব্যবহার সবথেকে ভালো একটি উপায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন চর্ম রোগের জন্য কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করতে হবে এবং এর উপকার কিভাবে পাওয়া যাবে।

  • ত্বকের ওপরের ব্রণ অথবা ফুসকড়িতে নিম পাতা ব্যবহার করা যায়। 
  • চুলকানি অথবা এলার্জিতে নিমপাতা ব্যবহার করা যায়।
  • একজিমা ও চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার করা যায়
  • যে কোন ফোড়া ও ঘায়ের ক্ষেত্রে নিম পাতা ব্যবহার করা যায়

ত্বকের ওপরে ব্রণ অথবা ফুসকুড়ি দূর করতে নিমপাতা ব্যবহার করা যায়। ত্বকের ব্রণ এর সমস্যা দূর করতে প্রথমে চার থেকে পাঁচটি নিম পাতা নিয়ে ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে । এরপর এগুলো একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্ট তৈরি করা হয়ে গেলে ব্রণের উপরে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। ব্রণের ওপর লাগিয়ে নেওয়া হয়ে গেলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই দিন একমাস ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

চুলকানি অথবা এলার্জিতে নিমপাতা দারুন ঔষধ হিসেবে কাজ করে। কারণ যেকোনো ধরনের চুলকানি অথবা এলার্জিতে যদি নিম পাতা ব্যবহার করা যায় তাহলে এগুলো জীবাণুমুক্ত হয়ে চুলকানি অথবা এলার্জি থেকে আরাম পাওয়া যায়। চুলকানি অথবা এলার্জি দূর করতে প্রথমে আপনাকে তাজা কিছু নিমপাতা নিতে হবে। এরপর এগুলো পানি দিয়ে পরিষ্কার করে এক থেকে দুই লিটার পানিতে কিছু পরিমাণ নিমপাতা নিয়ে ফুটিয়ে হালকা গরম অবস্থায় ব্যবহার করলে চুলকানি বা এলার্জির সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ টনসিল ফোলা কমানোর ঘরোয়া কার্যকরী উপায়

একজিমা ও চর্ম রোগে নিমপাতা ব্যবহার করলে সহজে আরাম পাওয়া যায়। একজিমা ও চর্ম রোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কয়েকটি নিমপাতা নিয়ে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এরপর একজিমা বা চর্ম রোগের স্থানে লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করলে একজিমা ও চর্ম রোগ থেকে একটু আরাম পাওয়া যায়। আবার এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে জীবাণু ছড়াতে পারে না ফলে একজিমা ও চর্ম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

শরীরে যেকোন স্থানে ফোড়া অথবা ঘায়ের ক্ষেত্রে নিম পাতা ব্যবহার করা যায়। কিভাবে ব্যবহার করবেন আসুন জেনে নেই-প্রথমে কিছু সতেজ নিমপাতা নিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর শরীরের যে স্থানে ফোড়া অথবা ঘা রয়েছে সেগুলোতে লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। এভাবে দিনে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করলে দ্রুত ফোড়া অথবা ঘায়ের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে ঘা এর ক্ষেত্রে নিমপাতার তেল অথবা নিম পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম পাতা

যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিয়ম করে নিমপাতা ব্যবহার করতে হবে। এতে আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। নিমপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার মূল কারণ হলো এটি রক্তের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং এটি তিক্ত স্বাদের হওয়ার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণ সেবন করলে রক্তের শর্করা মাত্রা যদি কমে যায় তাহলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই সঠিক নিয়মে এবং সঠিক পরিমাণ মতো নিমপাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আমরা জেনেছি খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়। এবার চলুন জেনে নিই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া
  • নিম পাতার রস খাওয়া
  • নিমপাতা গুড়া খাওয়ার নিয়ম
  • নিমপাতা সেদ্ধ পানি চা এর মতো করে খাওয়া

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য গাছের সতেজ নিমপাতা চার থেকে পাঁচটি পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এটি সপ্তাহে তিন দিন খাওয়া যেতে পারে। তাহলে উনার ডাইবেটিস খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আপনি চাইলে নিমপাতার রস খেতে পারেন। কিভাবে খাবেন চলুন জেনে  নেই-প্রথমে টাটকা কিছু নিমপাতা সংগ্রহ করে সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর একটি পেস্ট তৈরি করে  সেগুলো থেকে রস বের করে নিতে হবে। এরপর সেই রস খেতে হবে। তবে এটি খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন খালি পেটে নিমপাতা রস খেলে কি হয়।

নিমপাতা গুড়া খেলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পরিমাণ মতো নিমপাতা শুকিয়ে ভালোভাবে গুড়া করে নিতে হবে। এরপর নিম পাতা গুলা গুলো সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি থেকে পান করতে হবে। এভাবে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন খেতে হবে। তবে দুই সপ্তাহের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে অবশ্যই সঠিক নিয়মে যেতে হবে।

নিম পাতা সেদ্ধ পানি চায়ের মতো করেও খাওয়া যায় এতে আপনার ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। প্রথমে ছয় থেকে সাতটি নিমপাতা নিয়ে নিন এরপর অল্প কিছু পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। ফোটানো পানির ভেতরে নিমপাতা দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে এরপর তেতো কমানোর জন্য মধু মিশিয়ে পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে এবং নিমপাতা অতিরিক্ত তেতো স্বাদের হওয়ার কারণে মধু মেশালে তেতো স্বাদ কম হয়। আবার দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিমপাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ধরনের উপকার নিয়ে আসলেও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যা আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি সম্মুখীন হতে পারে। তাই অবশ্যই আপনাকে নিম পাতা খাওয়ার আগে এর ক্ষতিকর দিকগুলো ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তাহলে নিমপাতা খাওয়ার পর আপনার শরীরে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবন থাকবে না। নিম পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে সঠিক নিয়ম ও সঠিক পরিমাণ জেনে তারপর নিমপাতা খাওয়া উচিত। চলুন জেনে নিই নিমপাতা খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি-

  • অতিরিক্ত নিমপাতা খেলে রক্তের শর্করা কমিয়ে দেয়
  • দীর্ঘদিন নিম পাতা খেলে পেটের সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়
  • নিম পাতা শরীরের রক্তচাপ কমিয়ে দেয়
  • যারা গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী তাদের জন্য নিমপাতা বেশি ক্ষতিকর
  • অনেকের ক্ষেত্রে নিম পাতা এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে
  • লিভার ও কিডনির সমস্যা দেখা দেয়
  • শিশুদের ক্ষেত্রে নিম পাতার রস ঝুঁকিপূর্ণ

অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতা খেলে শরীরের রক্তে শর্করা কমিয়ে দিয়ে। শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসের সমস্যার কারণে নিয়মিত ডায়াবেটিসের ঔষধ সেবন করে। আবার তার পাশাপাশি দীর্ঘদিন নিম পাতা ব্যবহার করে তাহলে তাদের রক্তের শর্করার পরিমাণ দ্রুত কমিয়ে দেয়। ফলে খুব সহজেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাই অবশ্যই নিমপাতা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

খালি-পেটে-নিম-পাতার-রস-খেলে-কি-হয়

নিম পাতা খেলে যেমন শরীরে পেটের সমস্যা দূর হয়। কিন্তু যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যায় তাহলে আবার পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন নিমপাতা খেলে ডায়রিয়া সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আবার পেটে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব হয়। তাই নিমপাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই এর ক্ষতিকর দিক জেনে তারপর নিম পাতা খেতে হবে।

দীর্ঘদিন নিম পাতা ব্যবহারের ফলে শরীরের রক্তচাপ কমিয়ে শরীরকে দুর্বল করে দেয়। তাই টানা দুই সপ্তাহের বেশি নিম পাতার রস খাওয়া উচিত নয়। নিমপাতা সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন খেতে হবে এবং দুই সপ্তাহ খাওয়ার পর আবার কিছুদিন বাদ দিয়ে তারপর আবার খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এটি দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে শরীরের রক্তচাপ কমিয়ে শরীরকে ঝিমিয়ে দিতে পারে তাই নিমপাতা দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া যাবেনা।

  • যারা গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী তাদের জন্য বেশি ক্ষতিকর এই নিম পাতা। কারণ গর্ভবতী অবস্থায় নিমপাতা খেলে অতিরিক্ত প্রভাব গর্ভপাত ঘটতে পারে তাই এই সময় নিমপাতা না খাওয়াই ভালো।
  • অনেক ক্ষেত্রে আবার নিমপাতা এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ অনেক মানুষ আছে যাদের নিমপাতা সরাসরি ব্যাবহার করলে তকে জালাপোড়া করে।আবার চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়।তাই নিম পাতা ব্যাবহার করার আগে অবশ্যই আগে পরীক্ষা করে তারপর ব্যাবহার করা উচিৎ।
  • লিভার ও কিডনির সমস্যা দেখা দেয় অতিরিক্ত নিম পাতা ব্যাবহার করলে।নিম পাতা অতিরিক্ত তিক্ত স্বাদের হওয়ার কারণে যদি নিম পাতা দীর্ঘদিন ব্যাবহারের ফলে কিডনি ও লিভারের ক্ষতিগ্রস্ত হয়।তাই নিম পাতা দীর্ঘদিন ব্যাবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে নিম পাতার রস ঝুঁকিপূর্ণ কারণ ১০ বছর এর নিচে খাওয়ানো হলে এটি বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যেমন- অতিরিক্ত বমি ভাব দেখা দেয় আবার খিচুনির মতো সমস্যা হওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। তাই অবশ্যই শিশুদের ক্ষেত্রে নিম পাতার রস ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়ানো উচিত।

উপরে আলোচনায় নিম পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সকল তথ্য দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি নিম পাতা খেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিম পাতার এই ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নিয়ে তারপর খেতে হবে। তাহলে নিমপাতার ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে চলতে পারবেন।

শেষ কথাঃ খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

এতক্ষণ আমরা খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। নিম পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ঔষধি পাতা। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর অনেক গুনাগুন রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিম পাতার অনেক গুনাগুন থাকলেও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেগুলো আমাদের মেনে চলা উচিত। আমার মতে যদি আপনারা সঠিক নিয়মে নিম পাতার রস খেতে পারেন তাহলে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে এবং কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না।

খালি পেটে নিম পাতার রস খুবই অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত । কারণ যদি খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া যায় তাহলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিমপাতা রস আমাদের শরীরের জন্য উপকার হলেও এটি অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। যেন আমাদের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আপনি চাইলে এটি যদি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করেন তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকির সম্ভাবনা কম থাকে। তাই আমাদের নিমপাতা রস খাওয়ার আগে অবশ্যই সঠিক পরিমাণ জেনে এবং সঠিক নিয়মে খেতে হবে।

শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে আমাদের সঠিক নিয়মে নিমপাতা খাওয়া উচিত। নিম পাতা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্মূল করতে সাহায্য করে। আশা করছি এই পোস্টটি পড়ার পর নিমপাতা সম্পর্কে সকল ধরনের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। আমরা যদি সঠিক নিয়মে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের শরীরের ভেতরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। আবার ত্বকের যে কোন সমস্যা সহজে সমাধান আনতে পারি। এই পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। এতে করে আমরা আরো পোস্ট লিখতে অনেক আগ্রহী হই। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url